নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একদল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আমাদের চমৎকৃত করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের কেউ কেউ প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে কয়েক লাখ টাকা লোকসানও দিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের অনেকে নিজেই তাঁর প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করে নিচ্ছেন, কেউ সোনালি আঁশের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা নিয়েছেন।

আবার কেউ একেবারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন দিনের আলো জ্বালাচ্ছেন। এ রকম সাধারণের মধ্যে অসাধারণ ছয় প্রতিষ্ঠানের সাত উদ্যোক্তা পেয়েছেন আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার-২০২২

২০১১ সালের কথা। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন তরুণ আয়মান সাদিক। স্কুল–কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেছেন, তাই নিজের খরচ নিজেই চালানো উচিত—এমন ভাবনা থেকে ছাত্র পড়াতে শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই টাকা উপার্জনের পাশাপাশি ছাত্র পড়ানোর আনন্দও জেঁকে বসে তাঁর মাঝে।

শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা থেকে পরবর্তী সময় আয়মান সাদিক হয়ে ওঠেন দেশে ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের অন্যতম উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল।

মাত্র ১৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা টেন মিনিট স্কুল এখন পর্যন্ত ৩৪ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির মোট ১৩টি কার্যালয় আছে। সেখানে কাজ করছেন দুই শতাধিক কর্মী। প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক তাঁদের মুঠোফোনে টেন মিনিট স্কুলের অ্যাপ ব্যবহার করছেন। আর প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ শিক্ষার্থী টেন মিনিট স্কুলের মাধ্যমে পড়াশোনা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি–ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে আয়মান দেখলেন, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কোচিংয়ের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। একই সঙ্গে তাঁদের অনেক টাকাও খরচ হয়। তখন ভাবলেন, তিনি যেসব ক্লাস নেন, তা যদি রেকর্ড করে অনলাইনে প্রকাশ করা যায়, তাহলে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

এই ভাবনা থেকেই প্রথমে পাওয়ার পয়েন্ট ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভিডিও আধেয় (কনটেন্ট) তৈরি করে অনলাইনে প্রকাশ করেন। আধেয় ছড়িয়ে দিতে ২০১৪ সালে টেন মিনিট স্কুল নামে ফেসবুক পেজ খোলা হয়। পরের বছর বানানো হয় টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইট।

স্নাতক শেষে বহুজাতিক কোম্পানির চাকরিতে না গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটেন আয়মান সাদিক। নিজের ভার্চ্যুয়াল উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নেন বিভিন্ন স্পনসর। তবে করোনা বিধিনিষেধ শুরু হলে সংকটে পড়েন এই তরুণ উদ্যোক্তা। স্পনসরদের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কর্মীদের বেতন দিতে টাকাও ধার করতে হয়েছে তাঁকে।

২০২১ সালের শেষে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ভারতের সেকোয়া ক্যাপিটাল প্রায় ২০ লাখ ডলার বা ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে টেন মিনিট স্কুলে। এ সময় টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যুক্ত হন আরও দুই তরুণ আবদুল্লাহ আবইয়াদ ও মির্জা সালমান হোসেন বেগ।

আয়মান সাদিক বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে চার কোটি নিবন্ধিত শিক্ষার্থী আছেন। এ ছাড়া চাকরিপ্রার্থী ও কর্মজীবীদের হিসাব ধরলে সংখ্যাটা কয়েক গুণ বাড়ে। একজন ছাত্রের শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত এবং চাকরি পাওয়ার পরে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও টেন মিনিট স্কুল সহযোগিতা করছে।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো